রবিবার, ২৪ মে, ২০২০

সেকালের ঈদ - কবি মোক্তার আহমেদ ,সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।

একদা আমারও ঈদ আসিত মহানন্দে,
চোখে নিদ্রা নাহি আসিত জাগিতাম সানন্দে।
পিতার কাছে ধরিতাম বায়না নতুন জামা চাই,
বর্গাচাষি পিতা শূন্য হস্তে থাকিত নিরুপায়।
সেকালে ছিলাম মোরা চারি ভাই বোন,
কষ্টে পিতা যোগাত ডাল, ভাত আর নুন।
প্রতিবেশী সবাই যখন পড়িত বস্ত্র নতুন,
ভাই বোন মোরা আফসোসিতাম কত শত গুন।
পিতা যখন হাটে যাইত থাকিতাম উদগ্রীব,
কখন আসিবে পিতা, জ্বালাইয়া রাখিতাম প্রদীপ।
রিক্ত হস্তে পিতা যখন আসিত ঘরে ফিরি,
উপোস থাকিতাম মোরা পিতার সহিত অভিমান করি।
শয়ন কক্ষে মাতা-পিতা কষ্টে করিত প্রলাপ,
একদা তাহাদের সংলাপ হেরিয়া, হইলাম অনুতাপ।
সেইদিন হইতে করিলাম পণ, হইব বড় মস্ত,
সমগ্র অপূর্ণরে করিয়া দূর পূর্ণিব পিতার হস্ত।
বড় হইবার বাঞ্চ্ছা নিয়া পাঠ করিলাম শুরু,
একে একে পাঠ চুকাইয়া হইলাম শিক্ষাগুরু।
একালে আর নাহি মোর অন্ন বস্ত্রের অভাব,
তবু অন্যের লাগিয়া কাদি মন এই মোর স্বভাব

মানুষের মূল্য-কবি মোক্তার আহমেদ,সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।

ছোট্ট শিশু পিতাকে করিল প্রশ্ন শত,
জানিবার চাহিল মানুষের মূল্য কত?
পিতা সন্তানেরে দিতে চাহিল শিক্ষা,
পস্থরখন্ডের দ্বারা তাই দিয়াছিল দীক্ষা।
পিতা বলিল পস্থরখানি বিক্রি করিবে বাজারে,
দাম হাকিবে উচাইয়া দুই অংগুলি করে।
প্রথমদিন বাজারে নিইয়াছিল পস্থরখানি,
দুই অংগুলি দেখিয়া ক্রেতা বুঝিল দুইশত পেনি।
দ্বিতীয় দিন পস্থর নিয়া গিয়াছিল যাদুঘরে,
কর্তা শোধাইল বিক্রি করিবে কি দুই হাজারে?
তৃতীয়দিন পস্থর লইয়া দেখাইয়তে গিয়াছিল বণিক,
বণিক বার্তায় পস্থরের মূল্য হইবে দুই লক্ষের অধিক।
তিন স্থানের তিন রকমের মূল্য শুনি,
জিজ্ঞাসিল পিতারে বিস্ময়ে শিশুমনি,
একই পস্থরের মূল্য হইল কেন ভিন্ন পেনি?
পিতা শোধাইল মানুষের মূল্য পস্থরেরই মতন,
উপযুক্ত মূল্য পাহিবে, পাহিলে উপযুক্ত জন,
কোথাও তুমি ছাই হইবে, কোথাও তুমি রতন।

শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০

মহাবিশ্বের রহস্য-কবি মোক্তার আহমেদ,সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।

হে মহাবিশ্বের মহারাজ,তুমি বিশ্বভ্রহ্মন্ড করিয়াছ সৃজন,
সৃষ্টির রহস্য তুমি লুকাইয়াছ, করোনি উন্মোচন।
পনের শত কোটি বৎসর পূর্বে মহাবিশ্বকে রাখিয়াছিলে করিয়া অতি পরমাণু,
মহাবিস্ফোরণ ঘটাইয়া সৃজিলে ছায়াপথ আর গ্রহাণু।
সপ্ত নক্ষত্র দিয়া জ্যোতিষ্কমন্ডল গড়িয়াছ এ বিশ্বভ্রম্মান্ডে,
গোল, সর্পিল আর অবয়বহীনে নভশ্চরকে রূপাইয়াছ বাষ্পপিন্ডে।
বেটেলগমকে বৃহৎ করিয়া লুব্ধককে করিয়াছ উজ্জ্বলতম,
ধরণীকে বাসযোগ্য করিতে সূর্য্যিরে করিলে নিকটতম।
জীমূতবিহীন তমসাচ্ছন্ন আকাশে দিয়াছ ঋক্ষমন্ডলী,
কালপুরুষ, ক্যাসিওপিয়া আর দিয়াছ সপ্তর্ষিকুন্ডলি।
ধূলিকণা, নভশ্চর আর বাষ্পকুন্ডে গড়িয়াছ ছায়াপথ,
কসমিক ইয়ার হই প্রয়োজন ঘুর্ণন করিতে রথ।
ধুমকেতুরে করিয়াছ উজ্জ্বল ঝাঁটার ন্যায় দীর্ঘ বাষ্পময়,
হেলবপ নাকি সর্বাধিক উজ্জ্বল কহেন জ্যোতির্ময়।
অষ্ট গ্রহের সৌর পরিবার ঘুরিছে ক্রমাগত,
ধরণী মোদের ঘুরিছে চৌদিক পাহিছে আলোক যত।
সমস্ত শক্তির উৎস করিয়া সূর্য্যিরে করিলে দান,
সূর্য্যির কাছে অন্য সৃষ্টিরে ঋণি করিয়াছ হে মহান।
সূর্য আর ধরনীর মধ্যে চন্দ্র আসিলে ঘটাও অমবস্যা,
পূর্ণিমা তিথি হই ধরণীকে চন্দ্র- সূর্য করিলে গ্রাস্যা।
এই অসীম সৃষ্টির মধ্যে ক্ষুদ্র মোরা, করি অহংকার,
বুঝিবার সাধ্য নাহি মোদের রহস্য তোমার।

বৃহস্পতিবার, ২১ মে, ২০২০

প্রশংসা তোমার-কবি মোক্তার আহমেদ,সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।


 হে অধিপতি মহান, তোমারই স্তুতি বহমান,
আঠারো হাজার সৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠাইয়াছ মানব সন্তান।
অংকুর গরিয়াছ মোদের জনক জননীর ভ্রুণকোষে,
তনু মোদের বাধিয়াছ নিপুণ দীর্ঘ শাসে।
লহু, পলল খাচায় বাধিয়া পাঠাইয়াছ পরবাসে,
পেনি ছাড়া পবন দিয়াছ মোদের ভালবেসে।
দুইশত ছয় কাঠির নির্জীব এই কক্ষে,
পেন্ডুলাম আনতশির করিয়াছ বাঁ বক্ষে।
মর্মদেশ মোদের কম্পিছে আটচল্লিশ হাজার প্রতি ষাটে,
অধিকম্প মোদের গুপ্ত হইলে বিলীন হইব এই হাটে।
জ্ঞাত মোদের দিইয়াছ মস্তিষ্কে করিতে শ্রেষ্ঠ,
সমগ্র সৃষ্টিরে সৃষ্টিলে করিতে মোদের তুষ্ট।
সৃষ্টি তোমার সেবিছে মোদের হুকুমে ক্রমাগত,
মোদের তুমি ফরমাশিলে করিতে মস্তকনত।
ফরমাইয়েশ ভূলিয়া মোরা চাইলাম দুনিয়াদারি,
মন্দ চোরার ফান্দে পড়িয়া করিলাম পুকুর চুরি।
হুকুম তোমার অমান্য করি, পাপ যে পর্বত সমান,
তবু ক্ষমা করিয়া যাও মোদের তুমি রহমান।

মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০

আমন্ত্রণ-নাসরিন জাহান

আকাশ নেমে এসো নিচে
বেয়ে বেয়ে স্বপ্নের তরী
চল আজ বনে উৎসব করি।
সব সময় উপরে থাকতে
তোমার ভালো লাগে
আমি সবুজে ভরা,
মুখরিত মাটির গন্ধে
কখনো আঁকাবাকা পথ দূরে অংকিত হয়
পাখিরা খুঁজে নেয় সবুজ আলয়।
বুনো ফুলেরা অভিরাম সুভাস দেয়
ঠিক আপনের ন্যায়।
এসো আজ উপভোগ করি
নেমে এসো নিচে
চলো আজ বনে উৎসব করি।
চাঁদ, তারা,সূর্য ছাড়া ও
তোমার দেয়ালে থাকে
কত নামি-দামি নক্ষত্র
আমার সবুজে আছে শুধু সজিবের সৌমিত্র
দিও না কিছু , নিয়ে যেও সবুজের জড়ি
শাল-পিয়ালের গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে
চলে যাবে আবারও তারকা রাজির কাছে
যখন ক্রিং ক্রিং করে
বেজে যাবে সময়ের ঘড়ি
আকাশ , নেমে এসো নিচে
চলো আজ বনে উৎসব করি।
আমার কোথাও ঝোপের অন্ধকার
কোথাও বুনো ফুলের চমকপ্রদ বাহারি অলংকার
আকাশ, পিছিয়ে পড়বে সব কবিতার বাণী
প্রিয় দর্শনীই হবে বুনোফুলের রানী।
নেমে এসো নিচে
খুশিতে লুটিয়ে পড়ি
চলো আজ বনে উৎসব করি।।

শনিবার, ১৬ মে, ২০২০

সংক্ষিপ্ত সফর- কবি মোক্তার আহমেদ,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।

সংক্ষিপ্ত সফর

কবি মোক্তার আহমেদ,বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।


সদা উতলায় রই ঘোর, এই সংক্ষিপ্ত সফর মোর, স্বল্প নিশির সংসার ভ্রমণে যাইতে হইবে বহু দূর। অনন্ত প্রভাতের যাত্রী আমি গন্তব্যের নাহি শেষ, কঠিন দড়িয়া পাড়ি জমাবো বাহনের নাহি রেশ। শুরু মোর হইয়াছিল জনক মস্তিষ্কের ভাঁজারে, জননী মোর ঠাই দিয়াছিল তাহার জঠরে। মন্দহীনে ছিলাম বেশ মাতৃকার উদরে, অশান্ত মন বিদ্রোহীল না থাকিতে কুটরে। দশকাল পর এলাম যখন মুক্ত সমীরণে, দৃষ্টিলাম ভূবন,পাহিলাম চলন মাতৃবিহনে। ইন্দন, বারি, মৃত্তিকা এই ত্রয়ের বন্ধনে, নিশি মোর শুরু হইল ক্ষুদার আলিংগনে। মধ্য নিশি হেলায় ফুরাইল নবীন যৌবনে, লৌহ বিদুৎ বহিল অংগে গহীন শব্দহীনে। কনীনিকায় নামিল কামলালসা লাবন্য বদনে, বিমুখ হইলাম রাজধিরাজের মন্দের কারণে। প্রান্ত নিশি আসিলে মোর তনু হইলে আবল্য, চেতনা জাগৃল অন্তরে ক্ষয়িতে নিশি কল্য। দ্বিপ্রহরে জাগৃত আমি চাহি মনিবের অনুকূল্য, মনিব সুধায় একে দিলাম সত্তর হইবেনা সমতূল্য। নিশির প্রান্তে শূন্য হীয়ায় কাকুতি অজরে, প্রভাতের ঝুলি মোর রইল অসার, এই সংক্ষিপ্ত সফরে।

শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০

শীতের ভোর - ফখর উদ্দিন মোবারক শাহ

 শীতের ভোর

ফখর উদ্দিন মোবারক শাহ 


হাড় কনকন শীত পড়েছে,
ভীষণ লাগে ‍ঠাণ্ডা,
ভোর-বিহানে সুবাস ছড়ায়,
খেজুর রসের ঘ্রাণটা।

খেজুর রসের গরম পায়েস
ভারি মজার নাস্তা,
রসের লিটার খুব দাম নয়,
কিনতে অনেক সস্তা।

রোদের ঝিলিক একটু খানি
যেথায় এসে পরে,
বুড়া-বুড়ি ,নাত-নাতনীরা
এসে সেথায় ভীড়ে।

মুড়িওয়ালা হাঁক ছাঁড়ে 
খৈ লাগবে খৈ খৈ,
নয়া ধানে টুকরি ভরি,
তাই দিয়ে খই লই।
আমন ধানের মাড়া হতে
ভেসে আসে ঘ্রাণ,
নতুন ধানের পিঠা খাবো
উঠলো নেচে প্রাণ।       

বৈশিষ্ট্যযুক্ত পোস্ট

শরতের আহবান -ফাতেমা রহমান

আয় আয় সখা- সখি কে কোথায় আছিস তোরা। শুভ্র কাশেরা কানে কানে বলে মনে আছে যত দ্বন্দ্ব, গ্লানি সব এবার কর সারা। শরৎ এসেছে,শুভ্র সতেজ ...